রাজধানীর বেশিরভাগ ফুটপাত ও সড়ক দখল করে চলছে হরেক রকমের ব্যবসা। এতে যানজটের পাশাপাশি জনভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নগরবাসী। ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে প্রায়শই সিটি করপোরেশন ও পুলিশের উচ্ছেদ অভিযান চালাতে দেখা গেলেও ফলাফল মিলছে না। বরং উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।
গত ১২ মার্চ বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার ফুটপাতে অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান চালায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত। সেসময় ফুটপাতের একটি ফুডকোর্টের ব্যবসা করা মহিউদ্দিন নামে এক তরুণ উচ্ছেদ অভিযান বন্ধে প্রতিবাদ জানান। তিনি দাবি করেন, বাজারে সবকিছুর দাম যখন ঊর্ধ্বমুখী, তখন পরিবারকে সহযোগিতা করতেই তিনি এই দোকান পরিচালনা করছেন। তিনি তো চুরি ডাকাতি করছেন না। কাউকে অসুবিধা না করে এমন সৎ কাজও কেন তিনি এই বাংলাদেশে করতে পারবেন না? এসময় ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি আমার দোকান ভাঙলেন কেন? তাহলে আমাকে চাকরি দেন, আমার আয়ের উৎসের জোগান দেন। আমি শিক্ষার্থী, এইচএসসি শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে। পরিবারের খরচ জোগাতে ফুটপাতে দোকান করছি। এটা কি আমার অপরাধ? তাহলে আমাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যান।’
এরপর পুলিশ তাকে আটক করে মারধর করতে করতে পুলিশ ভ্যানে ওঠায়। মহিউদ্দিনের এই বক্তব্য এবং পুলিশের মারধরের ভিডিও মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর থেকে প্রশ্ন উঠতে থাকে, দেশের বেকারত্ব বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানে অভাব এবং পুলিশের মারমুখী আচরণ নিয়ে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।
পরবর্তী সময়ে আটক মহিউদ্দিনকে ছাড়াতে সরকারের দুজন উপদেষ্টার তৎপরতায় সেদিন রাতেই পুলিশ মুচলেকা নিয়ে তার বাবা-মায়ের জিম্মায় ছেড়ে দেয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহমেদ মাসুদ বলেন, উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে মহিউদ্দিন নামে ওই তরুণের আবেদনের পরিপেক্ষিতে তাকে আটক করা হয়েছিল। পরে তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ক্ষমা চাওয়ায় তার বাবা-মায়ের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে পুলিশ বলছে, ফুটপাত ও সড়ক দখল করে জনসাধারণের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা আইনগত অপরাধ। এছাড়াও অবৈধভাবে ফুটপাত দখল করে ভাসমান বা স্থায়ী দোকানপাট গড়ে ওঠায় যানজটের পাশাপাশি জনভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন সময় সিটি করপোরেশন ও পুলিশের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
গত শুক্রবার দুপুরে ধানমন্ডি সাতমসজিদ রোড এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, গত বুধবার পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানের পরও আগের মতোই ফুটপাত দখল করে রেখেছে দোকানীরা। পুলিশের অভিযানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দখলদারি অব্যহত রয়েছে। বিশেষ করে জিগাতলা থেকে ধানমন্ডি শংকর পর্যন্ত রাস্তার দুইপাশ ফুটপাত দখল করে বিভিন্ন দোকান গড়ে উঠেছে। অভিযানের পর যেন দোকানের সংখ্যা আরও বেড়েছে।
দোকানীরা জানান, সামনে ঈদ, ব্যবসা না করলে তারা চলবেন কী করে? ফুটপাতে দোকান করা ছাড়া তাদের আরও কোনও উপায় নেই। ফলে রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতেও তাদের ফুটপাতে দোকান করতে হয়। সুমন নামে এক ফল দোকানদার বলেন, ‘ফুটপাতে দোকান করার জন্য সেদিন ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে জরিমানা করেছে। তবে আমরা এখন কী করবো? এখানে ব্যবসা করা ছাড়া আমাদের কাছে আর কোনও উপায় নেই। পরিবার চালাতে রাস্তায় দোকান করতে হবে।’
এদিকে শুক্রবার রাজধানীর ঝিগাতলায় বেসরকারি ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয় পুরাতন ভবনের সামনে কথা হয় সেই ‘ভাইরাল’ মহিউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি ক্যাম্পাস ভবনের সামনে অন্যদের মতো ফুটপাতে একটি ফুডকোর্টের ব্যবসা করেন। সেদিনের অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বুধবার দুপুরে পুলিশ উচ্ছেদ অভিযানে শুধু আমার দোকানের বাক্সটা ফেলে দিয়েছে। পাশে অন্যদেরটাও ছিল। সেগুলো ধরে নাই। পরে আমি দৌড়ে এসে দেখি তারা (অভিযান দল) ১৫ নম্বরের দিকে চলে গেছে। আমি সেখানে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলি, কেনও তারা আমার দোকান ভাঙলেন?
ফুটপাত দখল করে কেনও ব্যবসা করতে হচ্ছে, জানতে চাইলে মহিউদ্দিন বলেন, আমি ২০২৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। এরপর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছি, এবছরও দিয়েছি। পাশাপাশি পরিবারের খরচ জোগাতে কিছু ইনকাম করা দরকার। কয়েটি জায়গায় চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েছি, হয়নি। পরে কোনও কিছু করতে না পেরে ফুপটাতে ‘আমেরিকান মিক্স চিপস’ বিক্রি শুরু করেছি। এতে মোটামুটি আয় হচ্ছে, ছোট বোনের খরচ দিতে পারছি। মা-বাবাকেও সাহায্য করতে পারছি। তিনি আরও বলেন, ফুটপাতে তো আর বেশিদিন ব্যবসা করবো না, ভালো একটা কিছুর ব্যবস্থা হলে চলে যাবো। ফুটপাতে দোকান করা আমার টার্গেট না। তবে দেশের জন্য কিছু করতে চাই, দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে চাই।
ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহমেদ মাসুদ বলেন, পরিবারের খরচ জোগানো কিংবা বাড়তি আয়ের জন্য মানুষ ব্যবসা করেন। তবে ফুটপাত ও সড়ক দখল করে কোনও স্থাপনা বসানো আইনানুগ অপরাধ। তাই জনসাধারণের নিরাপত্তার জন্য আমরা ফুটপাতের অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে থাকি। অভিযানের পর আবারও দখল হয়। এজন্যই এটা আমাদের নিয়মিত কাজের অংশ।

যানজটের পাশাপাশি জনভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নগরবাসী
উচ্ছেদ অভিযানেও থামছে না ফুটপাত দখল করে ব্যবসা
- আপলোড সময় : ১৬-০৩-২০২৫ ০৫:০৯:০৩ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৬-০৩-২০২৫ ০৫:০৯:০৩ অপরাহ্ন


নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ